কক্সবাজারের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়া, রাত্রিযাপন, বারবিকিউ পার্টি না করা সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রিটটি খারিজ করে দেন বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল মালেক ওই রিট আবেদন করেন।
গত ২৮ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসমা শাহীন স্বাক্ষরিত এক স্মারকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাঁচটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর ১৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ২৮ অক্টোবরের নির্দেশনা প্রত্যাহার চেয়ে একটি আবেদন দেন আবদুল মালেক।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তের ফলে আমার এলাকার (সেন্টমার্টিন) লোকজনের কর্মসংস্থান অতি সীমিত হয়ে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পর্যটনের মাধ্যমে যেখানে দেশের অর্থনীতি বর্ধিত হওয়ার কথা সেখানে এসব সিদ্ধান্তের ফলে পর্যটন শিল্পে ধস নামছে। অতিস্বত্বর ২৮ অক্টোবরের স্মারকের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার নামে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়াতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানানো হয়।
গত রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে প্রথমদিনে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটি ঘাট থেকে ৬৫৩ যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বার আউলিয়া নামে একটি জাহাজ।
এমভি বার আউলিয়ার পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রোববার তিনটি জাহাজ ছাড়ার পরিকল্পনা থাকলেও ছেড়েছে কেবল এমভি বার আউলিয়া। জাহাজটিতে ৮৫০ জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা থাকলেও যাচ্ছেন ৬৫৩ জন। রোববার পর্যন্ত এ রুটে কেয়ারী সিন্দাবাদ ও এমভি বার আউলিয়া ছাড়াও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। তবে যাত্রী সংকটের কারণে বার আউলিয়া ছাড়া অপর দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিন যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া নির্দেশনা মেনে পর্যটকরা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন।’
পর্যটকরা যাতে জাহাজে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ দেয়া হয়েছে। জাহাজে যাতে কোনোভাবে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর থাকবে পরিবেশ অধিদফতর।’
আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ওই মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। পরিবেশ অধিদফতরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে করা হয়েছে সদস্যসচিব।
বিগত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ইনানী সৈকতে স্থাপিত নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পাঠকের মতামত: